মূলদল বিএনপি সম্পর্কিতঃ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র দলীয় পটভূমি ও ইতিহাসঃ
‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ এই আদর্শিক দৃষ্টিভঙির প্রতীক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম প্রবর্তিত একমাত্র রাষ্ট্রীয় দর্শণ ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ বহুদলীয় গণতন্ত্র, উন্নত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সুখি ও সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ বির্নিমাণ ও ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে ৭১’এর সম্মূখ যুদ্ধের একমাত্র মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের সূর্যসন্তান , মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’।বাংলাতে এই দলটি ইংরেজি সংক্ষিপ্ত নামানুসারে ‘বিএনপি’ এবং এই নামেই সর্বাধিক পরিচিত। স্বাধীনতা যুদ্ধপূর্ব ২৫ বছর ধরে এই অঞ্চলের নাগরিকরা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। নিয়মিতান্ত্রিক এ লড়াইয়ের বিজয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পথে অর্জনের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পাক সমরজান্তার হঠকারিতা আমাদেরকে ঠেলে দিয়েছিল যুদ্ধের পথে। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারতের সহয়তা স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতির প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আধিপত্যের প্রভাব পড়ে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার ভারতীয় আধিপত্যের প্রভাব থেকে জনগণের অধিকার ও বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করতে পারেনি।
সার্বিক বাস্তবতায় স্বনির্ভর বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের আগমন অনিবার্য প্রত্যাশা ছিল। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি বাংলাভাষী পাকিস্তানি সৈনিক হিসেবে প্রবল বিক্রম লড়েছিলেন খেমকারান রণাঙ্গনে। স্বদেশ ও শত্রুপক্ষের কাছে তার সেদিনের অবিস্মরণীয় যুদ্ধ বিস্ময় সৃষ্টি করেছিল। আবার ১৯৭১-এ তিনি এক ঘোর দুঃসময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিল। প্রয়োজনের মুহূর্তে কি করতে হবে; জীবনবাজী রেখে সে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেয়ার এক সহজাত ক্ষমতা তাঁকে নেতৃত্বের আসনের দিকে সব সময় ঠেলে দিয়েছে। তাই ১৯৭৫-এর নভেম্বরের উন্মাতাল রাজপথে অভিষেক ঘটে তাঁর রাষ্ট্রক্ষমতার।
জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও সম্মূখ সমরের মহানায়ক ছিলেন। সুশৃঙ্খল আইন অনুগত সৈনিক জিয়াউর রহমান সিপাহী-জনতার বিপ্লবের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু পরিনত হয়েছিলেন। আচমকা তার কাধে অর্পিত হয় এক বিশৃঙ্খল দেশের শাসনভার। তখন সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খল ছিল না। উস্কানি ও চক্রান্তে জর্জরিত সশস্ত্র বাহিনীকে তিনি কঠোর পদক্ষেপে সুশৃঙ্খল করলেন। দেশে রাজনীতি ছিল না, জিয়া রাজনৈতিক দলের পুনরুজ্জীবন ঘটালেন। রাজনীতিকদের জারি করা সামরিক শাসন তুলে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শন উদ্ভাবন করে তিনি জাতিকে উপহার দিলেন পরিচয় ও আদর্শের পতাকা। সময়ের দাবি মেটাতে তিনি সৃষ্টি করলেন নতুন রাজনৈতিক দল বিএনপি।
ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্ত্বরে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি)’ নামে এই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধমে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে যে শূন্যতার সৃষ্টি করা হয় তা পুরনে ইতিহাসের দাবী, দেশবাসীর আকাংখায় বিএনপির অভ্যুদয় ঘটে। বিএনপির ঘোষণাপত্রে বলা হয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য, ব্যাপক জনভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, এক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ অধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি গঠিত হয়েছে। ১১ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় ইলেক্টোরাল কলেজ নির্ধারণ করা হয়। জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৫ জন সহ-সভাপতি, ১ জন সাধারণ সম্পাদক, ১ জন কোষাধ্যক্ষ, ৪ জন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১ জন করে প্রচার, সমাজকল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, দপ্তর, যুব, মহিলা, ছাত্র, শ্রম ও কৃষি আন্তর্জাতিক বিষয়ক ও বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক পদ রাখা হয়। দলের প্রথম কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে অবস্থিত।